Mon, Sep 8, 2025

আমাদের ক্রমাগত অন্ধকারের ইতিহাস

আমাদের ক্রমাগত অন্ধকারের ইতিহাস
  • PublishedMarch 12, 2013

আজ থেকে বহু বছর আগে ১৯৭৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পর পর একটি কবিতা লেখার দায়ে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে হোলো কবি দাউদ হায়দারকে। আমি যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে তিনি এমন কবিতা লিখেছেন যেটিতে অনেকের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে সেক্ষেত্রেও কি এমন কেউ ছিলেন না যিনি সেসময় মৌলবাদীদের কলার চেপে বলতে পারতেন, ” উনি কবিতা যদি লিখেই থাকেন আর সেটি যদি কাউকে আঘাত করে অথবা আইনের বিরুদ্ধচারণ হয় তবে সেটি আমরা বাংলাদেশীরাই বুঝব। আমার দেশের একজন নাগরিক কেন দেশ ছেড়ে চলে যাবেন? আমার সন্তান অপরাধ করলে সেটা বুঝব আমরা। কেন তাকে নির্বাসনে যেতে হবে?”

নাহ, কেউ সে কথা বলেন নি। আমাদের রাষ্ট্রে এগুলো অলীক কল্পনা। দাউদ হায়দার চলে গিয়েছিলেন। আর তিনি দেশে ফেরেন নি। ঠিক এই যায়গাতেই আমরা প্রথম মার খেলাম ধর্ম দিয়ে। এই যায়গা থেকেই শুরু হোলো স্বাধীন দেশে অন্ধ ধর্মান্ধদের রাজত্ব। ব্যাস সুযোগ পেয়ে গেলো এরা। খুনী জিয়ার সময় ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল অনুমতি পেয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।

তসলিমা নাসরিনও একসময় ধর্ম নিয়ে লিখলেন। সেই আগে কিছু না বলার কারনে এদের তেল তখন আকাশ্চুম্বী। সুতরাং এই যাত্রাও তারা সফল। তসলিমাও চলে গেলো দেশ ছেড়ে। ৯২ তে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার গুজব নিয়ে বাংলাদেশে লাগলো রায়ট। কার্টুনিস্ট আরিফ একটা নীরিহ কার্টুন লিখে দেশ ছাড়লেন। চলে গেলেন নরওয়ে। কেউ মনে রাখলনা তাঁর কথা। ব্যস, আর যায় কোথায়। আমরা মৌলবাদীদের বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হলাম যে এই দেশ আসলে তাদের জন্য আদর্শময় যায়গা। এই দেশেতেই ওদের হবে।

২০০১ সালে নৃশংস ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন হোলো। এই যে আজকে আমি বললাম “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়” শব্দ দুইটি, এটিও এক ধরনের লজ্জাস্কর শব্দ। একই দেশের অধিবাসী হয়ে আমরা আলাদা আলাদা করে দিয়েছি সংখ্যালঘু, আদিবাসী এইসব অংশে ভাগ ভাগ করে দিয়ে। মাঝখান থেকে জিতলো কারা? মাঝখান থেকে জিতলো ধর্ম নিয়ে যারা ব্যাবসা করে, তারা।

আমরা মুখে মুখে বলি আমরা ওদের এইসব ট্রিক্স বুঝি। ওদের চালাকি আমরা বুঝি। আদতে আমরা বুঝি চ্যাটের বাল। আমরা  আসলে কিছুই বুঝি না। ভান দেখাই আমরা জামাত-শিবির সহ সবার চালাকি বুঝি। আমরা সাধারণ মানুষই আসলে এক নাম্বারের ফাতরা। মিছিলে, সমাবেশে বলে আসি “আমি কে? তুমি কে? বাঙালী…বাঙালী” কিংবা “তোমার আমার ঠিকানা…পদ্মা মেঘনা যমুনা” কিন্তু বাসায় এসে সেই আমি-ই শালার সেই প্রগিতীশীল বাঙালী মনের ভেতর সন্দেহ পোষন করি আমার দেশ টয়লেট পেপার পড়ে। আমিই নাস্তিক-আস্তিক ইস্যুতে আমার ইমানদন্ড ফোলাতে থাকি ব্যাপক উৎসাহে।

আমি ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ। মুসলমানদের পবিত্র কোরান শরীফে লেখা রয়েছে “তোমরা নিয়তিকে গাল দিওনা, কেননা আমিই নিয়তি”, আজকাল এসব দেখে আমি আর নিয়তিকে গাল দেইনা… যতই আমাদের দেশ স্বাধীন হোক সব ধর্মের মানুষ একত্রে থাকবে বলে কিংবা মুখে আমরা যতই বলিনা কেন আমরা সেক্যুলার রাষ্ট্র, এসব সব কিছুই মিথ্যা কথা।

আমাদের পেটে পেটে ধর্মের আক্রোশ, ধর্মের ক্রোধ। ধর্মের জন্য আমরা নিজের সন্তানকে, নিজের মাকে, নিজের বাবাকে ফতোয়া দিয়ে অবৈধ করে দিতে পারি। বেহেশত…পরকালের আরাম…হায়…তোমাকে পাবার জন্য হে বেহেশত…তোমাকে পাবার জন্য…