Tue, Sep 9, 2025

নতুন তত্ত্ব নতুন নাম ও পরিভাষা

নতুন তত্ত্ব নতুন নাম ও পরিভাষা
  • PublishedOctober 3, 2017

গবেষণা করার জন্য অত দূরে যেতে হয় কেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাকাঠামো নিয়ে গবেষণাই একটা যুগান্তকারী পিএইচডি হতে পারে। এর আছে একটা আধুনিক খোলস, সুবাদারী প্রশাসন কাঠামো, আলঙ্কারিক জ্ঞানচর্চা। এর গোটা ব্যবস্থাটা হয়তো বিশ্বজুড়ে অনবদ্য ও স্বাতন্ত্রমণ্ডিত। প্রতিটি পরিস্থিতির কোন নীতিগত সমাধানের চেষ্টা না করে কি করে অস্থায়ী সমাধানের ভিত্তিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা যেতে পারে, এমন দৃষ্টান্ত আর খুব মিলবে না।

গণরুমের সংস্কৃতি যেমন ‘বড় ভাই তন্ত্র’ নামের একটা অপূর্ব প্রথার জন্ম দিয়েছে, তেমনি আছে ‘সালামের প্রাপক’, কে কাকে চিনতে ও সালাম দিতে বাধ্য।, এর সাথে প্রাণীকূলের ‘আলফা মেল’ হায়ারার্কির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য, গোত্র সমাজের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য, জমিদারী প্রথার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য, যুদ্ধপরিস্থিতির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা করে অপূর্ব সব সম্ভাবনায় পৌঁছানো সম্ভব। সম্পদ ও উপকরণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কত ভাবে বৃহৎসংখ্যক সম্ভাব্য তপ্ত জনগোষ্ঠীকে সুবোধ রাখা যেতে পারে, তারও রাজনৈতিক ছক হিসেবে এটা থেকে শেখার বহু কিছু আছে।

শিক্ষকদের বিষয়েও, নিয়োগ, নীল দলে ইত্যাদির বৈঠকে অংশগ্রহণ, পদোন্নতি, গবেষণা পদ্ধতি জ্ঞানার্জন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক– বহু বিষয়েই সব তথ্যই আমরা জানি, কিন্তু এই তথ্যগুলোকেই গুছিয়ে একটা তাত্ত্বিক কাঠামো দেয়া, সূত্রবদ্ধ করার কাজটা পুরোপুরি বাকি আছে। এবং ৭০-৯০ দশকের রূপান্তর পেরিয়ে কিভাবে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে এই পৌনে সামন্তীয়, পূর্ণ লাঠিয়াল নিয়ন্ত্রিত বঙ্গীয় ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, তার একটা রূপরেখাও গবেষণার জন্য দরকার হবে।

যেমন, বহুক্ষেত্রে দেখা যাবে, বাইরে থেকে সামরিক, আমলাতান্ত্রিক, মোল্লাতন্ত্র কিংবা অন্য কোন চাপকে দুনিয়ার বহু বিশ্ববিদ্যালয় কখনো কখনো অতিক্রম করতে পেরেছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনাটা ঘটানো সম্ভব হয়েছে ভেতর থেকে, ভেতরেও পাহারা, ভেতরেই আতঙ্ক, ভেতরজাত নিয়ন্ত্রণ। ফলে বাইরের আলস পাহারাদাররাও হাসতে পারছে একে নিয়ে। কিন্তু বিষয়টা তো কেবল হাসাহাসির না, গবেষকের মন নিয়ে খুঁজলে জহরৎ মিলবে এখানে। এত কার্যকর নিয়ন্ত্রণ মধ্যযুগেও তো ছিল না যাযকতন্ত্রে!

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের ছেলেমেয়েরা গবেষণার বিষয় খুঁজলে এই কাঠামোটা নিয়ে কাজ করার বহুবার পরামর্শ দিয়েছি। এখনো কেউ রাজি হননি। কিন্তু এমন গবেষণাক্ষেত্র খুব অল্প মিলবে। এখানে যে জটিল বাস্তুসংস্থান, মিথোজীবিতা ও পরজীবিতা তৈরি হয়েছে, তা সামলাতে অবশ্য গবেষককে মানুষ ও প্রাণীকূল, সামষ্টিক সমাজবিদ্যা ও ব্যক্তিগত মনোবিদ্যার জটিল সব তত্ত্বের মুখোমুখি হবার সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে। এবং যদি এইটাকে যদি শুধু একটা নিষ্ঠুর নরক বলে ভাবেন, তাহলেও কিন্তু চলবে না। নিশ্চয়ই কোন না কোন শুশ্রুষাও সকলেই পান, যা ব্যবস্থাটা সকলের পক্ষেই যতই অসহনীয় হোক, শেষ পর্যন্ত সকল প্রতিবাদ হজম করে ফেলার ক্ষমতা অর্জন করে, তার রহস্যটা বোঝার তো চেষ্টাটা থাকা দরকার।

আর, কি নামে ডাকবে একে, সেইটাও জরুরি। সকল নতুন তত্ত্ব নতুন নাম ও পরিভাষারও জন্ম দেয়। এখনো যে এর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে দীর্ঘ বাক্য ও বিশেষণের আশ্রয় নিতে হয়, কারণ, জানি না কী নামে ডাকি ওকে। একটা পরিশ্রমী গরুখোঁজা গবেষণা এই নতুনতম ব্যবস্থাটির জন্য একটা যথাযোগ্য নামকরণও নিশ্চয়ই করতে পারবে।