Friday, January 22, 2021
Daily Atheist
Advertisement
Advertisement
  • প্রথম পাতা
  • এথিস্ট সংবাদ
  • এলজিবিটি সংবাদ
  • আর্টিকেল
  • মতামত
  • রিভিউ
  • সম্পাদীয়
  • আমাদের সম্পর্কে
  • আমাদের টিম যুক্ত হোন
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
Daily Atheist
No Result
View All Result
Home মুক্ত চিন্তা

তসলিমা নাসরিনের সমালোচনা মানেই কী নারী বিদ্বেষ?

anikamallik by anikamallik
September 28, 2017
in মুক্ত চিন্তা
592
SHARES
3.3k
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

১. কিশোর বয়সের গল্প

কিশোর বয়সে এলাকার টঙ এর দোকানে বসে চা বিড়ি খেতাম। অনেক কিশোর তরুণ ছেলেপেলেই আসতো, একসাথে আড্ডা দিতাম। একজন ছেলে ছিল, নাম ঠিক মনে করতে পারছি না। সে কিশোর বয়সেই প্রেম করে বিয়ে করে ফেলে। সেই কারণে সে মোটামুটি প্রেম ভালবাসা বিষয়ে অন্যান্য ছেলেদের এক ধরণের মোটিভেশনাল স্পিকারে পরিণত হয়েছিল। বিশাল তার জনপ্রিয়তা, প্রচুর তার ভক্ত অনুসারী। কীভাবে প্রেম করবে, কীভাবে রুম ডেইট করবে, কীভাবে মেয়েদের কোন জায়গায় কী করলে মেয়েরা বেশি মজা পাবে, সেই সব বিষয়ে তার ছিল বিস্তর জ্ঞান। এবং এক কাপ চায়ের বিনিময়ে সে তার জ্ঞান ভাণ্ডার মোটামুটি উজাড় করে দিতো।
এইসব আড্ডার মধ্যে পরে যেতাম মাঝে মাঝে। ছেলেটা তার বাসর রাতের গল্প, তার প্রেম করে বিয়ে করা বউয়ের সাথে তার কী কী হয়েছে, তার বউ ঠিক কী কী করেছে, সেগুলোর খুব রসালো এবং রগরগে বর্ণনা দিতো। সত্যি বলতে কী, এইসব বিবরণ শুনে আমার বমি আসতো। ভালবেসে বিয়ে করা কারো সম্পর্কে এরকম বর্ণনা দেয়া যায়, তা আমার কল্পনাতেও আসতো না। কীভাবে সম্ভব? একটা সম্পর্কতে যদি পরস্পরের প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা না থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে প্রেম আছে কীভাবে? আমি কয়েকদিন অবাক হয়ে শুনেছিলাম।
বর্ণনাগুলোর কিছু অংশ না বললেই চলছে না। নইলে আপনারা বুঝতে পারবেন না। সেই প্রায়ই বলতো, তার বউ একটা চরম মাল, একটা খানকি। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রস মিশিয়ে নানা কাহিনী বলে যেতো অনর্গল। বিশ্বাস করুন, নিজের বউ সম্পর্কে এগুলো সে বাইরের ছেলেদের বলে বেড়াতো। তার বউকেও আমরা চিনতাম। এলাকার ছেলেরা, যারা নিয়মিত এইসব গল্প শুনত, তারা তার বউয়ের দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকাত, আপনারা নিজেরাই বুঝে নেবেন। এগুলো ছিল সব চাইতে সভ্য এবং মার্জিত কথা। বাকিগুলোর বর্ণনা আর দিতে চাচ্ছি না। আপনারা বুঝে নেবেন। অত্যন্ত অসম্মানজনক এবং ব্যক্তিগত সেইসব কাহিনী। সেগুলো বাইরের মানুষের কাছে রসিয়ে বলার মানে কী, অন্যদের মজা দেয়ার মানে কী, আমি এখনো বুঝি নি। তাতে সে কী আনন্দ পেতো, তা আজও বুঝতে পারি নি।
আমি মনে করি, প্রেম ভালবাসা, যৌনতা, এইসব খুব ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি, এবং এসব ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা থাকা সবচাইতে জরুরি বিষয়। কাউকে আমি শ্রদ্ধা করি না, ভালবাসি না, তার সাথে শুয়ে যাচ্ছি, এবং বাইরে এসে বন্ধুদের সাথে মিলে ঐ মেয়ে সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলছি, এর মধ্যে বুদ্ধিমত্তার কিছু কী রয়েছে? নাকি উদ্ভট এক ধরণের রুচিহীনতা রয়েছে?

উল্লেখ্য, প্রেম ভালবাসা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাহীন শুধুমাত্র যৌন সম্পর্ক বিষয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। যে কেউ তা করতেই পারেন। তবে প্রেমের ক্ষেত্রে, ভালবাসার ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাটুকু খুবই জরুরি মনে করি। এই শ্রদ্ধাটুকু যেন সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলেও অঁটুট থাকে। দুইজনার দুইজনকে আর ভাল লাগছে না? আলাদা হয়ে যান, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে এমন কোন আইন নেই। প্রেম ভেঙ্গে গেছে, তাই ছেলেটি মেয়েটার ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করতে পারে না। একই কথা প্রযোজ্য মেয়েটির বেলাতেও। প্রেম ভেঙ্গে গেলে মেয়েটি এমন কোন চিঠি বা গোপন ছবি প্রকাশ করতে পারে না, যাতে আগের প্রেমিক ছেলেটিকে অসম্মান করা হয়। বেডরুমের কাহিনী, রসালো কেচ্ছা, ভিডিও বা ছবি, এইসবই ব্যক্তিগত থাকা উচিত। অনেকেই সেসব বন্ধুদের সাথে খুব মজা নিয়ে প্রকাশ করেন, এবং এক ধরণের মজা নেন। অনেকে আবার করেন নিজেকে নির্যাতিত বা মহৎ প্রমাণের উদ্দেশ্যে। অপরপক্ষকে নিন্দা করতে। অন্যের বাহাবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে।

২. ওহ মাই গড

ওহ মাই গড নামে ভারতে একটা মজার সিনেমা বানানো হয়েছিল না? মনে আছে? একজন নাস্তিক, তিনি সারাজীবন ধর্মের বিরুদ্ধে, ঈশ্বর নামক ব্যবসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কল্পিত ঈশ্বরের নামে আদালতে মামলা পর্যন্ত করে বসে। সিনেমাটির শেষের দিকে দেখা যায়, সেই লোকের ভক্তরা তার একটা মূর্তি বানিয়ে তাকেই দেবতায় পরিণত করতে শুরু করে। তার নামে জয়ধ্বনি দিতে শুরু করে। তার নামে ভক্তিবাদী গান তৈরি হয়, তার নাম জপ করা শুরু হয়। মানে হচ্ছে, আমাদের চরিত্র এতটাই অসভ্য যে, যেই ভক্তিবাদ, যেই দেবত্বের বিরুদ্ধে সারাজীবন যুদ্ধ, সেই মানুষকেই আমরা এক সময় দেবতার আসনে উঠিয়ে ফেলি। যুক্তি বুদ্ধি সব বিসর্জন দিয়ে তার নাম জপ করতে শুরু করি। অশিক্ষিত অসভ্য মানুষের চরিত্র এরকমই।
সিনেমার নায়ক ভদ্রলোক সততার সাথে নিজের মূর্তিটাই শেষে ভেঙ্গে দেন। এবং মানুষকে, নিজের ভক্তদের বোঝান, ভক্তিবাদের অবসান ঘটাতে হবে। যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু সব মানুষ কিন্তু এমন না। অনেকে এই ধরণের ভক্তি উপভোগ করেন। লোকে তার কথা বিচার বিবেচনা না করে, যুক্তি দিয়ে যাচাই বাছাই না করে ধন্য ধন্য করবে, অনেকেই এমনটাই কামনা করেন। যুক্তি প্রমাণ তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষনের চাইতে নিজেকে আরেকজন নবী বা পীর বা দেবতা ভাবতেই হয়তো উনাদের ভাল লাগে।
সকল ধর্মের ধর্মান্ধদের মধ্যে তো বটেই, বিশেষভাবে আমি আমার জীবনে দেখেছি ইসলাম ধর্মের মুমিন মুসলমানদের মধ্যে এই ব্যাপারগুলো। অসম্ভব বর্বর ইতর কিছু ব্যাপারকেও উনারা বেমালুম নানা ধরণের আবজাব কথা বলে জাস্টিফাই করে ফেলতে চান। যেমন ধরেন, যুদ্ধবন্দী ধর্ষণের বিষয়টা। উনারা সোনামুখ করে বলতে থাকেন, যেই যুদ্ধবন্দী মেয়েটার বাবা, স্বামী, ভাইকে মুহাম্মদের জিহাদী বাহিনী এইমাত্র জবাই করেছে, সেই সাফিয়া নামের মেয়েটি মুহাম্মদের শৌর্যবীর্য রুপসৌন্দর্য্য দেখে স্বেচ্ছায় রীতিমত নাচতে নাচতে মুহাম্মদের বিছানায় গিয়ে উঠেছিল। সেখানে কোন জোরাজুড়িই হয় নি! অদ্ভুত! এই মন মানসিকতার মানুষ হলে, কাল মিয়ানমার এই দেশ আক্রমণ করে উনাদের জবাই করার পরে উনাদের স্ত্রী এবং কন্যারা কী করবেন কে জানে!
ঐদিকে হাসিনার ভক্তদের কথাই ধরুন। তারা আরেক কাঠি সরেস চিড়িয়া বিশেষ। হাসিনা হাগু করলেও উনারা হয়তো কী সুন্দর হাগু বলতে বলতে হাসিমুখে তা খেয়ে নেবেন। একটুও দ্বিধা করবেন না। কয়েকদিন আগেই রোহিঙ্গাদের সীমান্তে ঢুকলে গুলি করে মারার আহবান জানানো লোক আজকে হাসিনার নোবেল পুরষ্কারের আহবান জানায়। ইতরামী আর হিপোক্রেসির আর সীমা নেই।
ঠিক একই মানসিকতা এখন দেখতে পাই কিছু নারীবাদী নাস্তিক লেখকের কয়েকজন হার্ডকোর ভক্তের। গুরু বা গুরুমাতা বা বন্ধুরা যাই লেখুক, যেমনই লেখুক, উনারা হুমড়ি খেয়ে ধন্য ধন্য করবেন। যুক্তি বুদ্ধি উনারা খরচ করবেন না। লেখার যুক্তি নয়, লেখকই হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ। লেখকের সাথে খাতির, লেখক তাকে নিয়মিত লাইক দেয়, শেয়ার দেয়, সেই কারণে অমুকে যা বলে সেটাই সঠিক! কী অদ্ভুত! অমুক লেখক যদি লাল রঙকে সবুজ বলেন, ভক্তের দল মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে জ্বি হুজুরানী বলে সমর্থন দেয়া শুরু করবেন। কী অদ্ভুত কাণ্ড!

৩. ভক্তিবাদ এবং পীরতন্ত্র

দীর্ঘদিন ধরে আমার লেখালেখির অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে এই ভক্তিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া। মগজের ব্যবহার, যুক্তি বুদ্ধির ব্যবহার। লেখক যেই হোন, তিনি যুক্তি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কথা বলছেন, সেই অনুসারেই উনাকে মাপা হবে। হোক সে গৌতম বুদ্ধ, হোক মুহাম্মদ, হোক যীশু, হোক সক্রেটিস, হোক মার্ক্স, হোক আরজ আলী, হোক আহমদ শরীফ, হোক হুমায়ুন আজাদ, হোক তসলিমা নাসরিন। এই লড়াই চালাতে চালাতে, আমি যেন নিজে একজন দেবতায় পরিণত না হই, তার জন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। যারা আমার লেখা পড়েন বা পড়তে ভালবাসেন, তাদের সব সময় উৎসাহিত করি, আমার লেখায় কোন সমস্যা দেখলে অবশ্যই যৌক্তিক সমালোচনা করুন। যৌক্তিক সমালোচনা করলে আপনাকে আমি সম্মানই জানাবো। লেখক নয়, লেখায় যুক্তি তথ্য প্রমাণ এগুলোই গুরুত্বপুর্ণ।
ব্যক্তিগত আক্রমণ, গালাগালি, ইতরামি বাদ দিয়ে যদি কেউ যৌক্তিক সমালোচনা করেন, আমি উনাদের সম্মান জানাই সব সময়ই। ইদানীং কালের কিছু ব্যক্তিপুজারী একটিভিস্টদের কাজ কর্ম দেখে তাই মর্মাহত হই। ওহ মাই গড সিনেমার কাহিনীই ফিরে ফিরে আসছে।

৪. নারী বিদ্বেষী এবং ইসলামোফোবিক

ইসলামপন্থীদের এক বিশাল চালাকির নাম হচ্ছে ইসলামফোবিয়া শব্দটির উদ্ভাবন। এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় ইসলামের নামে বর্বরতা জায়েজ করতে। আপনি প্রতিবাদী হয়ে একটুও কথা বলতে পারবেন না। আপনাকে দেয়া হবে ইসলামফোবিয়ার টাইটেল। নিজেদের মতাদর্শ সমালোচনার হাত থেকে রক্ষার এ এক হাস্যকর কৌশল।

ইসলামপন্থীরা নাস্তিকদের জবাই দেবে, আপনার বলতে হবে ওগুলো দুষ্টু ছেলেদের দুষ্টুমি।
ইসলামপন্থীরা সমকামীদের জবাই দেবে, আপনার বলতে হবে এর সাথে ইসলামকে জড়াবেন না।
ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের জবাই দেবে, আপনার বলতে হবে ওগুলো ইহুদীদের চক্রান্ত।
ইসলামপন্থীরা বোমা মারবে, আপনার বলতে হবে ওগুলো খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র।
ইসলামপন্থীরা কাফের কতল করবে, আপনার বলতে হবে ওগুলো সিআইএ মোসাদের কাজ।
ইসলামপন্থীরা বিবি পেটাবে, আপনার বলতে হবে বিবি পেটানো মুসলমান পুরুষের ধর্মীয় অধিকার।
ইসলামপন্থীরা মেয়েদের গাড়ি পর্যন্ত চালাতে দেবে না, আপনি তার বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন তো মরেছেন। আপনাকে দেয়া হবে ইসলামোফোবিক টাইটেল।

প্রতিবাদ করবেন না, সমালোচনা করবেন না। করলেই আপনি তথাকথিত ইসলামোফোবিক। আপনাকে এই ট্যাগ দিয়ে আপনার মুখ চেপে ধরা হবে। আপনার সমালোচনা বন্ধ করে দেয়া হবে। আপনার আর সামান্যতম জায়গা থাকবে না প্রতিবাদ করার। সব মুখ বুজে মেনে নেয়া ছাড়া আপনার আর কোন পথ খোলা নেই। কিছু বললেই আপনি ইসলামোফোবিয়াতে আক্রান্ত! অদ্ভুত! ইসলামী জঙ্গিরা আল্লাহো আকবর স্লোগান দিয়ে গলা কাটতে এলেও আপনি দৌঁঁড়ে পালাতে পারবেন না। পালাতে চেষ্টা করলেই আপনাকে ধরে ওরা বলতে শুরু করবে, আপনি এত ইসলামোফোবিক কেন মশাই? একটু গলাটাও কাটতে দিচ্ছেন না?

ঠিক একই শঠতাপূর্ণ পথ এখন ধরেছেন অনেক লেখকও, সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এটা খুব সহজ কৌশল। আপনি উনাদের সমালোচনা করতে পারবেন না, তা যত যৌক্তিক সমালোচনাই হোক না কেন। সমালোচনা করলেই আপনি হয়ে যাবেন নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক। অথবা অন্য কোন ট্যাগ দেয়া হবে। আরে, আলোচনা, যুক্তি পালটা যুক্তি, তর্ক বিতর্ক ছাড়া কোন সুস্থ কথা বলার জায়গা কী থাকে?

আমি একজন নারীবাদী বলেই নিজেকে পরিচয় দিই। নারীবাদী বলেই আমি মনে করি, প্রতিটি মতাদর্শ, প্রতিটি মানুষ সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত। কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তা সে যেই হোন না কেন। সমালোচকের মুখ বন্ধ করতে আপনি সমালোচককে নানা ট্যাগ দিতে পারেন, নানা উৎকট বকাবাজি করতে পারেন, কিন্তু সেগুলোতে আসলে আপনি নিজেকেই হাস্যকর প্রমাণ করবেন।

৫. তসলিমা নাসরিনের সমালোচনা

খুবই দুঃখের বিষয় যে, সারাজীবন ধর্ম, পুরুষতন্ত্র, সমাজ, প্রথা, প্রতিষ্ঠানের তুমুল সমালোচনা করে যাওয়া তসলিমা নাসরিন নিজের সামান্যতম যৌক্তিক সমালোচনাও হজম করতে শেখেন নি। যুক্তির বিপরীতে পাল্টা যুক্তিও কিন্তু দেয়া যেতো, তাতে খুব ভাল কিছু আলোচনাও হতে পারতো। সেই ঘটনাটি নিয়েই বলছি।

কয়েকদিন আগে তসলিমা নাসরিন এই লেখাটি উনার ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন।

লেখাটি পড়ার পরে আমিও একই রকমের পাল্টা একটি স্ট্যাটাস লিখি, অনেকটা কৌশলে তার লেখার সমালোচনা করেই। আমার লেখাটি এইঃ

এবং যেহেতু আমি তসলিমা আপুর মতের সাথে একমত হই নি, আপু আমার স্ট্যাটাসে মন্তব্য লিখেছেন,

তসলিমা নাসরিন আমার অন্যতম প্রিয় একজন মানুষ, একজন লেখক তো বটেই। উনার মত সাহসী লেখকেরা না থাকলে আজকে আসিফ মহিউদ্দীনের হয়তো জন্মই হতো না। অবশ্যই আমি তসলিমা নাসরিনকে আমাদের দেশের নারী জাগরণের অন্যতম প্রধান বলে মনে করি। কিন্তু তার সকল কথাকে আমি ধন্য ধন্য করি না। সেটা আমি শিখি নি। যুক্তি বুদ্ধি বিচার বিবেচনাই আমার কাছে মূখ্য। ব্যক্তি নন।

প্রিয় তসলিমা আপু। আপনি ব্যক্তিগতভাবে আমার একজন হিরো। কিন্তু আপনি সমালোচনার উর্ধ্বে কেউ নন। আপনি পীর নন, আপনি দেবী নন। আপনি মুক্তচিন্তার একজন সৈনিক, এবং আপনিও সমালোচনার যোগ্য। আপনার শেখার বয়স শেষ হয়ে যায় নি। মানুষের শেখার বয়স কখনই শেষ হয় না। আমি নিজেও একজন নারীবাদী হিসেবেই বলছি, নারীবাদ মানে প্রেমের মানুষ, ভালবাসার মানুষকে অসম্মান করা নয়।

অবশ্যই নারীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুরুষতন্ত্র দ্বারা নির্যাতিত, এবং আমি নিজেও সেই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমি চাই, প্রতিটি মেয়ে ডিগনিটি নিয়ে বেঁচে থাকুক। শুধু মেয়ে কেন, ছেলে মেয়ে হিজরা সকলে। আস্তিক নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী। সমকামী স্ট্রেইট বাই সেক্সুয়াল। শুধু মানুষই বা কেন, পশুপাখী পর্যন্ত। আপনি আপনার যেই দুই ঘণ্টার প্রেমিকের কথা বলেছেন, সেও। সেও ডিগনিটি নিয়ে বেঁচে থাকুক। কেউ তার সম্পর্কে বন্ধুদের সাথে মিলে এমন কথা আর না বলুক যে, তার সঙ্গ দুইঘণ্টার বেশি সহ্যই হয় না। বা সে একটা জিনিস। আমার কোন মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে যদি আমি বন্ধুদের আড্ডায় মেয়ে বন্ধুটিকে মাল বা জিনিস বলি, তাকে আমার দুই ঘণ্টা সহ্য হয় বলি, তাতে মেয়েটির অসম্মান হয়। তার ডিগনিটি নষ্ট হয়। সেটা আমি করতে পারি না। ভালবাসার বা প্রেমের মানুষকে নিয়ে তো অবশ্যই না। 

আপনার লেখাটির সমালোচনা হিসেবে আমি নিচের লেখাটি লিখেছিলাম।

সেদিন আমি আর আমার বউ ট্রেন স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম। পাশেই রেস্টুরেন্টে দেখলাম, দুইজন ছেলে সামনা সামনি বসে আছে, একজন আরেকজনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। বিশ্বাস করুন, তাদের চাহুনির মধ্যে এমন কিছু জাদু ছিল, এমন একটা মায়া ছিল, পরস্পরের প্রতি তাদের তীব্র ভালবাসাটুকুর উষ্ণতা আমরা রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম। আমার বউ আগে এরকমভাবে গ্যে দের প্রেম ভালবাসা করতে দেখে নি। তাই দাঁড়িয়ে দুইজন দেখছিলাম। ভালবাসার দৃশ্য খুব সুন্দর হয়।
ওরা একজন আরেকজনার চুল স্পর্শ করছিল। গালে আলতো করে আদর করছিল। সবচাইতে অদ্ভুত ছিল তাকিয়ে থাকা। দৃষ্টিতে মাদকতা, আর মুগ্ধতা। বোঝাই যাচ্ছিল, একজন আরেকজনকে কী প্রচণ্ড ভালবাসে ওরা। আমাদের খুব ভাল লাগছিল। একটা অনুন্নত অশিক্ষিত বর্বর অসভ্য দেশ হলে ওরা হয়তো এরকমভাবে ভালবাসতে পারতো না। এই উন্নত দেশের মুক্তি আর স্বাধীনতা তারা উপভোগ করছে। ভালবাসার কোন ধর্ম বর্ণ লিঙ্গভেদ নেই, জাতপাত নেই। সীমান্ত নেই, কাঁটাতারের বেড়া নেই। ভালবাসা আর প্রেমের দৃশ্যের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই।
তসলিমা নাসরিনের সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসটি পড়ে খানিকটা বিরক্তই হলাম। উনার ‘প্রেমিক’কে উনি সপ্তাহে দুই ঘণ্টার বেশি সহ্যই করতে পারেন না। কী অদ্ভুত ব্যাপার! এরকম অসহ্য মানুষের সাথে প্রেম করতে উনাকে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে? নাকি সেরকম কোন সাংবিধানিক নিয়ম আছে? শুধুই সেক্স? তাহলে প্রেমিক বলার দরকার কী? সেক্স পার্টনার বললেও তো চলে।
দুইঘণ্টায় বড়জোর দুইবার সেক্স করা যায়। মানে হচ্ছে, সেক্সের সময়টুকু বাদে উনি প্রেমিককে এক মুহূর্ত সহ্য করেন না। এ কী রকম প্রেম আমি বুঝি না। হাত ধরা, চুলে বিলি কেটে দেয়া, হাগ করা, চুমু দেয়া, ভালবাসার মানুষের সাথে এগুলো করাতে বিরক্তি আসে? প্রেম মানে কী শুধুই খাট কাঁপানো? অদ্ভুত!
সেইসাথে, প্রেমিক প্রেমিকা স্বামী স্ত্রী পার্টনারকে কীভাবে কেউ জিনিস বলে অভিহিত করেন, তাও আমি বুঝি না। সম্পর্কটা তো হয় শ্রদ্ধার, সম্মানের। আমি যদি আমার বউকে জিনিস বা মাল বলে অভিহিত করি, তার সম্মানটুকু কই থাকে? এরকম অসম্মানমূলক শব্দ, ভালবাসার মানুষ, প্রেমিককে নিয়ে কেউ বলতে পারে? অদ্ভুত!
প্রেম, ভালবাসা টিকে থাকুক। সীমানাগুলো ভেঙ্গে যাক।

৬. নারীবাদ কি সকল পুরুষের বিরুদ্ধে?

আচ্ছা, সকল মুসলমানই কী সন্ত্রাসী? কাফের কতল করতে চায়? নাস্তিক কোপাতে চায়?
নাহ, তা কেউ কখনো বলে নি। নাস্তিক মুক্তমনাগণ বলছেন, ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থের মধ্যে প্রথিত রয়েছে কুপমণ্ডুকতা, সাম্প্রদায়িকতা, নারী বিদ্বেষী, সমকামীবিদ্বেষী, মুক্তচিন্তাবিদ্বেষী, হিংসা, ঘৃণা এবং বর্বরতার বীজ। তাই বিবেক বুদ্ধি ব্যবহার না করে সেই ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থের অন্ধ অনুসরণ মহা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যারা ধর্মের বাণীকে অক্ষরে অক্ষরে সত্য মনে করে, সেই সব ধার্মিক সন্ত্রাসী এবং বর্বর হতে বাধ্য। সাম্প্রদায়িক হতে বাধ্য। তাই মুক্তমনাগণ বলেন, সকল মুসলমান সন্ত্রাসী নয়, তবে যেসকল মুসলমান কোরআনের প্রতিটি বাণী অক্ষরে অক্ষরে আক্ষরিকভাবে বিশ্বাস করে, তারা সন্ত্রাসী হতে বাধ্য। একই কথা অন্যয় অনেক ধর্মের ক্ষেত্রেই সত্য। ঠিক এই কারণেই, রোহিঙ্গা মুসলমানদের থেকে শুরু করে প্যালেস্টাইনের মুসলমানদেরও মানবাধিকারের পক্ষে আমরা লিখি। আবার একই সাথে, ধর্মতন্ত্র, ইসলাম, কোরআন, সরিয়া আইনের কঠোর সমালোচনাও করি। আমাদের লড়াইটা প্যালেস্টাইনের নিরীহ শিশুটির বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াইটা কিশোরী রোহিঙ্গা মেয়েটার বিরুদ্ধে নয়। ইসলাম দ্বারা তারা যেই নিপীড়নের শিকার, আমাদের লড়াইটা তাদের পক্ষেও।

আচ্ছা, সকল পুরুষই কী পুরুষতন্ত্র ধারণ করে?
নাহ, সকল পুরুষ পুরুষতন্ত্রকে ধারণ করে না। নারীবাদী হতে হলেই যে নারী হতে হবে, নইলে সহি নারীবাদী হওয়া যাবে না, এইসব বাজে কথা। মূল্যহীন কথা। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার মধ্যে প্রথিত রয়েছে নারী বিদ্বেষী, হিংসা এবং বর্বরতার বীজ। যারা মনের মধ্যে ধারণ করে, সে পুরুষ হোক কিংবা নারী, সে বর্বর হতে বাধ্য। অসংখ্য নারী আছেন যারা পুরুষতন্ত্র ধারণ করেন, পুরুষকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন। তারাও নারীবাদের শত্রু।

আমাদের লড়াইটা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে। শিশ্নতন্ত্রের বিরুদ্ধে। মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ধর্মতন্ত্রের বিরুদ্ধে। একই সাথে, ভক্তিবাদ এবং পীরতন্ত্রের বিরুদ্ধে-  যুক্তিবাদ, মানবিক সম্পর্ক এবং ভালবাসার পক্ষে। এই বিষয়গুলো সকলের মনে রাখা জরুরি।

Share237Tweet148
Previous Post

Was Einstein a freethinker?

Next Post

A review of Yuval Noah Harari latest book, Homo Deus

anikamallik

anikamallik

Daily Atheist

The Daily Atheist is a magazine which provides in-depth articles, reviews and lively commentary from a rationalist viewpoint. Daily Atheist is an authentic source for news that matters to the atheist community. News, articles and other relevant events are provided here, written by our team of journalist and volunteers, which are based on atheism and solely focused on Atheist community.

আমাদের প্যানেল

Muhammad Abdur Rahman
Editor
Quazi Wahiduzzaman
Senior sub-Editor
Syed Sunvy Anick Hossain
Assistant Editor
Muhaiminul Biswaz Parvez
Contributor
Adnan Saqib
Contributor

Rajib Kumar saha

Contributor

Muhammad Jillur Rahman

Contributor and Archive Editor

গুরুত্বপূর্ণ লিংক

  • কুকিজ পলিসি
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • আমাদের টিমে যুক্ত হোন
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

© 2021 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.

No Result
View All Result
  • Home
  • Landing Page
  • Buy JNews
  • Support Forum
  • Pre-sale Question
  • Contact Us

© 2021 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.